বিশেষ প্রতিনিধি : বিগত সময়েও নারায়ণগঞ্জ সারাদেশে অনেকবার আলোচনায় এসেছে৷ ইতিবাচক-নেতিবাক দুই দিক থেকেই নারায়ণগঞ্জের খ্যাতি রয়েছে৷ বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও নারায়ণগঞ্জ সারাদেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে৷ রাজধানী ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জে৷ জেলাটিতে করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর হারও তুলনামূলকভাবে বেশি৷ আইইডিসিআর নারায়ণগঞ্জকে করোনা ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করেছে৷ যা সারাদেশের মানুষের মনে তৈরি করে অন্য এক আতঙ্ক৷ যার ফলে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারায়ণগঞ্জ থেকে আগত শুনলেই আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন৷ দেশের কয়েকটি জেলাতে নারায়ণগঞ্জের মানুষ কোয়ারেন্টিন কিংবা ঘরবন্ধী হয়ে আছেন৷ সারাদেশের কাছে নারায়ণগঞ্জ হয়ে উঠেছে আতঙ্কের এক নাম৷ নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন শুনলেই করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ভীত হচ্ছেন অন্য জেলার মানুষজন৷
নিজেদের কর্মস্থল নারায়ণগঞ্জ থেকে গত ৫ এপ্রিল গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে যান তিনজন। কিন্তু চাঁদপুরের সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে একজনের বাড়ি লকডাউনসহ অন্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয় স্থানীয় প্রশাসন। বাড়িগুলোতে লাল নিশানাও টানিয়ে দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে গত সোমবার (৬ এপ্রিল) গ্রাম পুলিশের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ৩ জনের বাড়িতে লাল পতাকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান বালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম মিয়াজী৷
গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের তোফাজ্জল মিয়ার মেয়ের জামাই ইয়াসিন (৩৩) নারায়ণগঞ্জে বসবাস করতো৷ অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম (২৯) নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া পুলিশ ফাঁড়িতে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সোমবার তাদেরসহ পার্শ্ববর্তী দশটি বাড়ি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান সাদী জানান, সম্প্রতি তারা উভয়ে সর্দি-জ্বর নিয়ে গ্রামে আসেন তারা। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাদের বাড়িসহ আশেপাশের দশটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের করোনা আক্রান্ত প্রবণ এলাকার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ একটি। তারা করোনা আক্রান্ত কিনা সেটাই নিশ্চিত না হওয়া গেলেও এলাকাবাসীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে লক্ষীপুর গ্রামের দশটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে পিরোজপুর আসায় একটি বাড়ি লকডাউন করেছে মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে এই লকডাউন করা হয়। পাশাপাশি ওই বাড়ির ছয় সদস্যকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চার দিন আগে ওই বাড়ির ছয়জন সদস্য নারায়ণগঞ্জ থেকে মঠবাড়িয়ায় যান।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ওই পরিবার নারায়ণগঞ্জে থাকে। চার দিন আগে আরও কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে তাঁরা মঠবাড়িয়ায় গ্রামের বাড়িতে আসেন। আজ দুপুরে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিপন বিশ্বাস ওই বাড়িতে গিয়ে বাড়িটি লকডাউন করেন। পরিবারের ছয় সদস্যকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরত যাওয়া তাবলীগ জামাতের ১১ মুসল্লিকে কক্সবাজারের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। সোমবার (৬ এপ্রিল) রাতে উখিয়ার ইনানী প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টারে তাদের কোয়ারেন্টিন করা হয়।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, যেহেতু নারায়ণগঞ্জ জেলা ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে তাই ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে তাদেরকে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এসময় তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কারও শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে, সে অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সুস্থভাবে কোয়ারেন্টিন শেষ হলে তারা বাড়ি ফিরে যাবে।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্যমতে (এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত) এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩৮ জন৷ গত (০৭/০৪/২০২০)চব্বিশ ঘন্টায় ১৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন৷ সব মিলিয়ে মারা গেছেন ৬ জন৷ এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও কয়েকজন মারা গেছেন যাদের নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হয়নি৷ ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন করোনা সংক্রমন রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে৷ মানুষকে ঘরমুখী করতে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে৷ এদিকে নারায়ণগঞ্জে করোনা শনাক্তের জন্য পরীক্ষাগার স্থানের জন্য দাবি তুলেছে জেলাবাসী৷
Leave a Reply