নিজস্ব প্রতিনিধি :
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি’র ৭২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির উদ্যোগে ৬মার্চ ২০২০ শুক্রবার বিকাল ৩টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রিয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে এক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবি জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড হাফিজুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। বক্তব্য রাখেন সিপিবি কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য এড. মন্টু ঘোষ, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জাকির হোসেন, বিমল কান্তি দাস, জেলা কমিটির সদস্য দুলাল সাহা, আঃ হাই শরীফ, শাহানারা বেগম, আঃ সালাম বাবুল, ইকবাল হোসেন ও এম.এ শাহীন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চলল দেশের মানুষ কি পেল? শ্রমিক, কিষান, মুটে, মজুরসহ সকল মেহনতি মানুষ পাহাড় সমান শোষন বৈষম্যের শিকার। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সরকারি আমলা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ে, শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি নির্ধারিত হয় না। মালিক তার সমিতি করতে কোন বাঁধা নেই। কিন্তু শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করতে দেওয়া হয় না।
আমরা চাই মেহনতি মানুষের সরকার । ছবি ওয়ারদে রহমান
লুটেরা, ধনী, এমপি, মন্ত্রী, আমলারা যা খুশি তাই করছে। তারা মানুষ খুন করলেও বাঁধা নেই। কিন্তু শ্রমিক কৃষকের কথা বলার অধিকার নেই। গণতন্ত্রের একেবারে বারোটা বাজানো হয়েছে। জনগনের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের প্রতি, ভোটের প্রতি জনগন একেবারেই আস্থা রাখতে পারছে না। সমাজ ও রাষ্ট্রে এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক শূণ্যতা তৈরী হয়েছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির পথ হচ্ছে মেহনতি মানুষের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান, মেহনতি মানুষের সরকার গঠন করা। শুধুমাত্র দল ও গদি বদলের সংগ্রামে লাভ নেই। এই লুটেরা ব্যবস্থার বদল ঘটাতে হবে। বুর্জোয়া লেজুর বৃত্তির রাজনীতি বামপন্থীরা অনেক করেছি আর নয়। সকল কমিউনিস্টদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকল বামপন্থীদেরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই লুটেরা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটা গণঅভ্যুত্থানের ডাক দিতে হবে। এজন্য শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের রাজনীতি দরকার।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আওয়ামীলীগ বিএনপি দুটোই লুটেরা ধনীদের দল। মুক্তিযুদ্ধের অর্জন এরা শেষ করে দিয়েছে। এরা মানুষকে আর কিছুই দিতে পারবে না। জামাত ও জঙ্গীবাদীরাতো আরও ভয়ঙ্কর। বামপন্থাই কেবল আজকের যুগের ভরসা। শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষ ও বাম বিকল্প নিয়েই আমাদের এগোতে হবে। শ্রমজীবী মানুষের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে, আস্থা রাখতে হবে।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, কথায় কথায় হকার, বস্তি ও রিক্সা উচ্ছেদ করা হচ্ছে কিন্তু শেয়ার বাজার, ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ও ব্যাংক লুটের নায়কদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। হকার, বস্তি ও রিক্সাশ্রমিকদের পেটে লাথি মারা হচ্ছে। এটা খুবই অন্যায় করা হচ্ছে। একারনে আমরা হকার, বস্তি ও রিক্সা শ্রমিকদের সাথে আন্দোলনে আছি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমজীবী মানুষের লড়াইয়ের মধ্যেই কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম হয়েছে। টঙ্ক আন্দোলন, নানকার বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন, সুতাকল, পাটকল, বস্ত্রকল শ্রমিকদের আন্দোলন, নারী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও শিক্ষা আন্দোলনের ভেতর থেকে কমিউনিস্ট পার্টি বেড়ে উঠেছে। গণমানুষের এমন কোন লড়াই নেই যেখানে কমিউনিস্ট পার্টি ছিল না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনের আহবান করছি। ভারতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। খুনী মোদিকে বাংলাদেশে আমন্ত্রনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বাংলাদেশের জনগন খুনী মোদিকে দেখতে চায় না। তার আমন্ত্রন প্রত্যাহার করা হোক। ভারত সরকারের নাগরিকত্ব বাতিলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সে দেশের বামপন্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন ঘোষনা করছি।
Leave a Reply