নারায়নগঞ্জ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জের ৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, আপনারা অনেকেই জানেন আমি আগেও বলেছি, এখনও বলেছি- আমাকে মন্ত্রীত্ব দেওয়া হয়েছে, পার্টির সেক্রেটারি করা হয়েছে, নেই নাই।
পদ-পদবীর জন্য, ধান্দা রাজনীতি করতে আসি নাই। রাজনীতি করতে আসছি রাজনীতির জন্য, ধান্দা করার জন্য নয়। বক্তব্য দেই সত্য কথা বলি এখন এটা অনেক লেখালেখি শুরু হয়েছে। সত্য যদি গোপন করি তাহলে রাজনীতিবিদ হলাম কিসের। পলেটিক্স করবো সত্য বলবো।
সাংবাদিকতা করবো সত্য লিখবো। না লিখতে পারলে চুপ থাকবো। রাজনীতি করতে গেলে সত্য কথা না বলতে পারলে চুপ থাকবো। আমি মনে করি সত্যটা বলা উচিৎ। যেই যিনিস আমি আগে করেছি সেটা যদি ভুল প্রমানিত হয় আর আমি না বলি তাহলে আগামী প্রজন্ম সেই পথটা বেঁছে নিবে। এটাই আমার উদ্দেশ্য।
বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) বিকেলে বিসিক-শিল্পপার্ক-পঞ্চবটি সংযোগ সড়কের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএনডি প্রজেক্ট নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, নারায়গঞ্জের জায়গার দাম এবং সৌন্দর্য ঢাকা এবং গুলশানের চেয়েও বেড়ে যাবে। এর প্রথম কারণ ডিএনডি প্রজেক্ট। আসলে ডিএনডি প্রজেক্ট কেউ নিতেই চায়নি। কোন মন্ত্রণালয় এই প্রজেক্ট নিতে চায়নি এবং না নেওয়াটিই স্বাভাবিক। কারণ এটার দায়িত্ব ছিলো সিদ্ধিরগঞ্জ সিটি করপোরেশনের।
সিটি করপোরেশন বলেছে আমি নিবো না। আইয়ুব খানের আমলে শাক-সবজি করার জন্য এই প্রজেক্টটি করা হয়েছিলো। সারা বাংলাদেশের ২৫ ভাগ রেভিনিউ কিন্তু আমরা এই এলাকা থেকেই কাভার করি।
প্রথমবার এমপি হওয়ার পর থেকেই ডিএনডি প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন দাবি করে শামীম ওসমান বলেন, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আমাকে বলতে হয়েছিল ব্যারিষ্টার আনিস সাহেবকে আমার বলতে হয়েছিলো আপনি রিজাইন (পদত্যাগ) করেন নয় আমি রিজাইন করবো।
তখন প্রধানমন্ত্রী ইশারা দিয়েছিলেন এবং তার ইশারার পরেই মন্ত্রী উঠে বলেছিলেন যে আপনারটা পাশ। এই ডিএনডি প্রজেক্ট একনেকের এজেন্ডাতে ছিলো না কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজে এখানে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ দিয়েছিলো। সেনাবাহিনী এই কাজটা করছেন।
সামনে ডিএনডি প্রজেক্টের কাজে আরেকদফা বরাদ্দ বাড়ছে ইঙ্গিত দিয়ে শামীম ওসমান বলেন, আমি সেনাবাহিনীর কাছে অত্যান্ত কৃতজ্ঞ। কারণ তারা চমৎকারভাবে এটা নিয়ে পরিকল্পনা করছেন। গত একমাস আগে তারা আমাকে জরুরী ভিত্তিতে তাদের ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। যে স্যার আপনি একটু আসে দয়া করে একটু দেখেন।
দেখার পর আমার চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে। বললাম এতো সুন্দর হবে আমাদের নারায়ণগঞ্জটা? তারা আমাকে বলল আমরা তড়িঘড়ি করে কাজটা শেষ করে দিতে পারি, কোন সমস্যা হবেনা। কিন্তু দুই-তিন বছর পরে যেই লাউ সেই কদু হয়ে যাবে। আমি বললাম আপনাদের কি লাগবে? বলল আমাদের আরো ১৪০০ কোটি টাকা দরকার।
আমি বললাম তখন কি হবে? তারা বলল, একদম ডেমরা থেকে শুরু করে সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যন্ত সমস্ত লেক উদ্ধার করে এর উপরে ব্রীজ নির্মাণ করা হবে। যারা বিদেশে গিয়েছেন তারা দেখেছেন যে, সেখানে ছোট ছোট খালের মধ্যে দিয়ে চমৎকার যাতায়তের ব্যবস্থা আছে। এই খালদিয়েই আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে পারবো। আমি বলেছি আপনারা এগোন, আমি করবো। অলরেডি এই প্রজেক্ট পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাশ করা হয়েছে।
প্রায় দুইবছরপর চুপ থাকার পর আবারো শহরের হকার ইস্যু নিয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছেন এমপি শামীম ওসমান। ২০১৮ সালের ১৬ জুন হকার ইস্যুতে মেয়র আইভীর উপর হামলার ঘটনার পর প্রত্যক্ষ বক্তব্য দেয়া থেকে সরে আসেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বক্তব্যে শামীম ওসমান বলেন, আমাদের শহরটা খুব খারাপ এবং এই শহরটা খুব খারাপ বলার পেছনে দেখি কিছু কিছু পত্রিকায় যে এর জন্য নাকি হকাররা দায়ী। নারায়ণগঞ্জে মিছিল হচ্ছে হকাররা মিছিল করছে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে। পুলিশরা গিয়ে আবার সেইখান কাউর কথায় তাদের উঠাচ্ছেন। সিটি করপোরেশনের কথায় উঠাচ্ছেন।
কাউকে আমি দায়ী করছি না। আমি হকারদের পক্ষে না। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কোনটা। হকারকে উঠিয়ে দেয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ না মানুষের পেটে ভাত দেয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন যারা এটা করতে চান তাদের কাছে আমার প্রশ্ন? আমি দেখছি আমরা গরীব অপসারন করছি।
গরীব অপসারন করা দরকার না লিংক রোডের দুই পাশে যেই ময়লার স্তুপ সেটা অপসারন করা দরকার। গরীব নিধন করবেন না মশক নিধন করবেন। হকারদের উঠিয়ে দিলে হয়তো তাদের বাচ্চারা না খেয়ে থাকবে। কিন্তু যানজট কি বন্ধ হয়ে যাবে? যদি যায় তাহলে ঠিক আছে। নইলে পুনর্বাসন করেন। আজকের দিনটা হয়তো আমার শেষ দিন। তাই আসুন ভালো কিছু কাজ করি।
এরপর যে যে এমপি হতে চান, হনগা। সমস্যা নেই। কে মেয়র হতে চান, হনগা; আমার কোন সমস্যা নেই। এখানে অনেকেই আছেন যাই করেন. গরীব মানুষকে কষ্ট দিয়েন না। গরীবের পেটে লাথি মারলে কিন্তু আল্লাহর আরশ কাঁেপ। যারা লোকাল পত্রিকায় লিখে মনে করেন, আমাদের গরীবের পেছন থেকে সরিয়ে দিবেন? আমরা গরীব মানুষের পিছন থেকে সরবো না।
শামীম ওসমান বলেন, লিংক রোড ৬ লেন হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এর জন্য ৫০০ কোটি টাকা পাশ হয়েছে। চাষাঢ়া থেকে একটা রাস্তা যাচ্ছে এটাও একনেকে পাশ হয়ে যাচ্ছে। পঞ্চবটির যেই রাস্তাটি আছে প্রতিদিন সতেরো হাজার শুধু বড় গাড়ি এই রাস্তাটি দিয়ে চলে। এখানে একটি রাস্তা হবে এবং সেটা আশা করি এই এলাকার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে।
নারায়ণগঞ্জে একটি সমস্যা হলো খাস জমি থাকলেও আমরা পাইনা। ডাটা বেজ কোম্পানীর জন্য আমি একটি প্রকল্প পাশ করে রেখেছি কিন্তু জায়গা পাচ্ছিনা। কাশীপুর একটা পেয়েছি যদি সেখানে হয় তাহলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠবে। নারায়ণগঞ্জে এমন অংসখ্য কাজ আগামীতে হবে।
ফতুল্লা বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ বাদল, সেক্রেটারি ও বক্তাবলি ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল, হোসেয়ারি সমিতির সভাপতি নাজমুল আলম সজল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু প্রমুখ।
Leave a Reply