শুভ-অশুভ, প্রাকৃত-অতিপ্রাকৃত শক্তি নিয়ে চর্চা হয়ে আসছে যুগে যুগে। বিশ্বে্ আছে হাজারো বিশ্বাস, ধারণা, ইতিহাস। ঠিক এভাবেই প্রায় ৫ হাজার বছর আগে থেকে মেসোপটেমিয়া এবং মধ্য এসিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে শয়তান বা খারাপ শক্তি থেকে বাঁচতে এই ইভিল আই বা শয়তানের চোখ (নীল,সাদা,কালো রং-এ অলংক্রিত পাথর) ব্যবহারের রেওয়াজ চলে আসছে। তারই সূত্র ধরে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ থেকে এখন পর্যন্ত তুরস্কে ইভিল আই ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে আসছে। প্রচলিত বিশ্বাস মতে ‘ইভিল আই’ মানে সত্য ও বিশ্বাসের প্রতীক।
নীল মানে আকাশের রঙ, তাই নীল চোখ হল ভালো কর্ম, উদার মন ও শুভ শক্তির প্রতীক। তুরস্কের ইস্তাম্বুলের বাহসেসিহির বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের এক অধ্যাপক বলেন- এই ইভিল আইয়ের অলঙ্কারের নীল রঙ মধ্য এশিয়ার সেলজুক তুর্ক জাতির দেবতা গোক টেংড়ি, যিনি আকাশের দেবতা নামে পরিচিত, তার সঙ্গে সম্পর্কিত। সেলজুকরা ইসলাম গ্রহণের পরেও তারা এই রঙের ব্যবহার তাদের বিভিন্ন স্থাপত্য এবং অলঙ্কারে অব্যাহত রেখেছিলেন।
৫৮ বছর বয়সী মাহমুদ সুর তুরস্কের ইজমিরের বাসিন্দা, তার ফ্যাক্টরিতে এই ইভিল আই অলঙ্কার তৈরি করা হয়। এই ইভিল আই সম্পর্কে তিনি বলেন- এটি একটি বিশ্বাস। এটি এমন এক সংস্কৃতির অংশ, যা আমাকে প্রায় ৩ হাজার বছর পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
তুরস্কের জনগণ বিশ্বাস করে নজর বনজু নামে নীল-সাদা-কালো প্রতীক (তাবিজ) দুষ্ট নজর থেকে সুরক্ষা দেয়। বিষয়টি তুরস্কে এতটাই জনপ্রিয় যে দেশটির সবখানে এই প্রতীক (তাবিজ) চোখে পড়ে। সেই সঙ্গে যেসব বিদেশি পর্যটক তুরস্কে আসেন তারাও দেশটি থেকে এই প্রতীক (তাবিজ) সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। দুর্ভাগ্য-বদ নজর এবং হিংসাত্মক আচরণ এড়াতে ‘ইভিল আই’ তাবিজ বহুল ব্যবহার তুরস্কে।
প্রায় ৩ হাজার ৩০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকে অঞ্চলটিতে জনপ্রিয় এ পাথর। যা দিয়ে অলংকার, তৈজসপত্র ছাড়াও বানানো হয় তসবিহ।
একজন আঙ্কারার ছোট্ট উপহারের দোকানের মালিক আয়েসগুল আয়েকতিন জানিয়েছেন- এই ‘ইভিল আই’ আমরা সাজসজ্জায় শুধু ব্যবহার করি আর কিছুই নয়। আমার দোকান থেকে এই ‘অলঙ্কার’ অনেক বিক্রি হয়। এগুলোর কোনো শক্তি আছে এমন বিশ্বাস মানুষ করে না। এটা শুধুমাত্রই পুরনো এক ঐতিহ্য এবং সাজসজ্জার জন্যে অনেক ভালো।
Leave a Reply