খেলা ডেস্ক:
ম্যাচ শেষে দলের সেরা খেলোয়াড়কে ঘিরেই যত আগ্রহ থাকে সবার। কিন্তু কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে মেয়েদের ফুটবল লিগের প্রথম ম্যাচে দেখা গেল অন্য দৃশ্য। গতকাল বসুন্ধরা কিংস ১২-০ গোলে হারিয়েছে বেগম আনোয়ারা স্পোর্টিং ক্লাবকে। এক ডজন গোল খাওয়া দলের গোলরক্ষক আশা কর্মকারের চেহারায় রাজ্যের বিষণ্নতা। মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসার পথে সবাই ঘিরে ধরলেন চাপাই নবাবগঞ্জের কিশোরীকে।
জাতীয় দলের তারকা ফুটবলার সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকার, মারিয়া মান্দাদের নিয়ে গড়া বসুন্ধরা কিংস। এই দলের বিপক্ষে রক্ষণ সামলানোই ভারী দায়। সেখানে একেবারে আনকোরা দলটার অনভিজ্ঞ এই গোলরক্ষক যেন কাল পড়েছিলেন ক্ষুধার্ত বাঘের মুখে! একটু পরপর গোল হয়েছে, বল কুড়িয়ে এনে আবারও পাঠিয়ে দিয়েছেন মাঝমাঠে।
ম্যাচের ৫০ সেকেন্ডে যে গোল উৎসবের শুরু করেন সাবিনা, সেটা ম্যাচের শেষ মিনিটে শেষ করেন কৃষ্ণা। অবশ্য ২০ মিনিটে তিন গোল হজমের পর কোচ জহির ইকবাল তুলে নেন প্রথম গোলকিপার তাহেরা খাতুনকে। এরপর মাঠে নামেন আশা। কিন্তু আশা মাঠে নেমেও দলকে কোনো আশার আলো দেখাতে পারেননি। বরং আরও ৯টি গোল হজম করেছে। আশারই বা কী দোষ! সানজিদা, মনিকা, মারিয়া, কৃষ্ণাদের মুহুর্মুহু আক্রমণ সামলাতে পারেনি বেগম আনোয়ারার ডিফেন্ডাররা।
নিশ্চয় এত গোল হজম করে খুব খারাপ লেগেছে—ম্যাচ শেষে প্রশ্নটা করতেই আশার জবাব, ‘আমি একটুও মন খারাপ করিনি। বরং এখানে এত বড় মাপের ফুটবলারদের সঙ্গে খেলে আমার আরও অভিজ্ঞতা বেড়েছে।’
বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল খেলেছেন। এরপর দেশের শীর্ষ লিগে প্রথমবার খেলতে আসা। কমলাপুরের কৃত্রিম টার্ফ, এত আনুষ্ঠানিকতা, টেলিভিশন আর ক্যামেরার ঝলকানিতেই যেন মুগ্ধ আশা। স্কুলের অন্য মেয়েদের তুলনায় উচ্চতা বেশি বলে ক্রীড়া শিক্ষক আশাকে গোলকিপার বানিয়ে দেন। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। এক সময় মায়ের উপার্জনে সংসার চলত। কিন্তু মা বর্তমানে অসুস্থ। বড় ভাই পেশায় নরসুন্দর। ফুটবল খেলে পরিবারকে সাহায্য করতে পারবেন, এই ভেবেই খেলায় এসেছেন, ‘লিগে প্রথমবার খেলে খুব ভালো লাগছে। প্রথম ম্যাচ বলে একটু বেশি গোল হয়েছে। তবে আশা করি পরের ম্যাচে আরও ভালো খেলব। আমার স্বপ্ন জাতীয় দলে খেলা। আর ফুটবল খেলে যে টাকা পাব সেটা মায়ের হাতে তুলে দিতে চাই।’
Leave a Reply