বর্তমান খবর রিপোর্ট : বৈশ্বিক মহামারী এতোদিন তাণ্ডব চালাচ্ছিল দেশের বাইরে। ৮ মার্চ এই নারায়ণগঞ্জ দিয়ে দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে আইইডিসিআরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে সরকারি-বেসরকারিভাবে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা শুরু হতে থাকে। বন্ধ করে দেয়া হয় স্কুল।
যোগাযোগের প্রায় সকল মাধ্যম গণপরিবহণ, ট্রেন, লঞ্চ; শিল্পপ্রতিষ্ঠান, গার্মেন্ট, মার্কেট সব একেএকে বন্ধের ঘোষণা আসে। নামানো হয় সেনাবাহিনী। ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি যার সময় পরবর্তীতে বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। সবাইকে বাসায় থাকার পরামর্শ দেয়া দিয়ে অকারণে বের না হতে বলা হয়। কিন্তু তাতেও অনেকে কানে তুলছিলনা।
করোনায় দেশে মৃত্যু হয়েছিল প্রথমে নারায়ণগঞ্জের বাইরে। কিন্তু করোনার ছোবল থেকে রেহাই পেলোনা নারায়ণগঞ্জ। গত ৩০ মার্চ বন্দরের নাসিক ২৩নং ওয়ার্ডের জিএ রোডে মারা যাওয়া এক নারী করোনায় আক্রান্ত ছিলেন বলে নিশ্চিত হন আইইডিসিআর। তবে ওই দপ্তর থেকে নিশ্চিত করা হয় ২ এপ্রিল। ডেথ রিপোর্টে স্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলা হওয়ায় সাধারণভাবেই দাফন করা হয় সেই নারীকে।
আইইডিসিআর থেকে জেলাপ্রশাসনকে জানানোর পরপরই লকডাউন করে দেয়া হয় ওই সড়কের ১০০টি পরিবারকে। চব্বিশ ঘন্টা মনিটরিংয়ে রয়েছেন পুলিশের সদস্যরা জানিয়েছেন পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম। করোনায় মৃত্যুর ঘটনায় থমথমে অবস্থায় পুরো নারায়ণগঞ্জ।
এদিকে জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত নারীকে অসুস্থ থাকাবস্থায় প্রথমে নেয়া হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে তার সংস্পর্শে আসা এক ডাক্তারসহ ১০ কর্মীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ডাক্তার দেখাতে এসে শহরের পাইকপাড়ায় ওই মৃত নারী অবস্থান করেছিলেন ২৯ মার্চ।
যার কারণে ওই মৃত নারীর ৮ আত্মীয়কেও হোম কোয়ারেন্টানে থাকতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা করোনা ফোকাল পারসন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত মৃত নারী অসুস্থ অবস্থায় এক রাত নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়া এলাকায় ওই আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। সেখানে দুই পরিবারের আটজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
করোনায় নারীর মৃত্যুর ঘটনায় তৎপরতা আরো বাড়িয়েছেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বিভিন্ন অলি-গলিতে মাইকিং, রাস্তায় রাস্তায় টহল বাড়ানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরসহ পুরো জেলার নানা উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অকারণে যাদের ঘোরাঘোরি করা থেকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছিলনা, তারাও এখন বেশ সতর্ক অবস্থানে। না পারতে কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছেননা। শহরের ফুটপাতে বিচ্ছিন্নভাবে যেসব হকার মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস নিয়ে বসতেন তারাও সড়কে ছিলেননা। পুরো শহর ছিল একেবারে নীরব।
এদিকে টহল জোরদার করেছে সেনাবাহিনী। নারায়ণগঞ্জ শহরসহ উপজেলাগুলোতেও তাদের টহলে কড়াকড়ি আরোপ করতে দেখা গেছে। নারায়ণগঞ্জে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর লেফট্যানেন্ট কর্ণেল আব্দুল মোত্তাকিম জানান, ‘শুধু মোটিভেশনাল এপ্রোচে না থেকে এঅবস্থায় কঠোর হওয়ার কোন বিকল্প নেই। করোনার ভয়াবহতা থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য কঠোর হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। করোনার ভয়াবহতা অনেকেই হয়তো উপলদ্ধি করতে পারছেননা।’
শুক্রবার দুপুরে শিবুমার্কেট এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি টিমের টহলের দায়িত্বে ছিলেন সাভার ক্যান্টেনমেন্টের ৪৫ এমএলআরএস রেজিমেন্টের মেজর ফরহাদ। তিনি বলেন, ‘মানুষ এখনো অসচেতনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের সতর্ক করা হচ্ছে। আমরা নিয়মিতভাবে আমাদের টহল জোরদার করছি। রাস্তায় চলাচল করা মানুষদের আমরা বারবার বোঝাচ্ছি সতর্ক হওয়ার কোন বিকল্প নেই।’
জেলায় করোয় মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরদিনই নারায়ণগঞ্জের কাঁচাবাজারগুলোতেও মানুষের ভীড় অনেক কমে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন অলিগলিতেও মানুষের উপস্থিতি একেবারেই কমে গেছে। মানুষ এখন প্রতিনিয়ত টেলিভিশন চ্যানেল এবং সংবাদপত্র-অনলাইনে নারায়ণগঞ্জের খবর রাখছেন। করোনায় মৃত্যুর খবরে আটকে পড়া মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কমেছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে।
না পারতে কেউ বের হচ্ছেননা। তবে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশনসহ সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। অনেকে জেলা প্রশাসনের কাছেই ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। মানুষকে ত্রাণ ঘরে পৌঁছে দিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩৬ কাউন্সিলরদের সাথে সভা করেছেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন।
এসভা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মূলত এই সভার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে সিটি করপোরেশনের মধ্যে বাড়িতে থাকা লোকজনের মধ্যে সঠিকভাবে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া। আমরা বারবারই বলছি, ঘরেই থাকুন, খাদ্যসামগ্রীর সমস্যায় পড়া ব্যক্তিদের ঘরে ত্রাণ পৌঁছে যাবে।’
Leave a Reply