স্টাফ রিপোর্ট: করোনা ভাইরাসের বিস্তারে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ঘরবন্দি নগরীর ও আশপাশের হাজার হাজার কর্মহীন মানুষ। বিশেষ করে অনুদান নেয়ার জন্য যারা হাত পাততে পারেন না-তাদের অবস্থা দিন দিন হয়ে যাচ্ছে দুর্বিষহ। পরিবারের লোকজনকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়তে যাচ্ছেন তারা।
ইতিমধ্যে অনেকেই সামনের দিনগুলোকে নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেছেন। নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে আলাপ করে তাদের এই অসহায়ত্বের কথা জানাগেছে।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হওয়ার পরে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করেছে। প্রথম অবস্থায় আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এখন ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এ ঘোষণা বলবত থাকবে। অবশ্য বর্তমানে প্রতিদিনই করোনা ভাইরাস যেভাবে বিস্তার লাভ করছে তাতে করে এ বন্ধের সময় দির্ঘায়িত হতে পারে বলে অনেকেরই ধারণা।
করোনার এই মহাদুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে সারাদেশের মানুষ বর্তমানে ঘরবন্দি। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বেশির ভাগ মানুষ ঘরের বাইরে যাচ্ছেনা। মানুষের কাছে এখন অর্থের চেয়ে জীবন বাঁচানো জরুরী হয়ে পড়েছে। এ কারনে মানুষ না খেয়ে থাকার পরিস্থিতি হলে ও তারা বাইরে বের হচ্ছে না। যদিও প্রাণ বাঁচাতে খাওয়াটাও জরুরী।
করোনার ভয়াবহ সংকটের মধ্যে সরকারিভাবে অসহায় দুঃস্থদের কমবেশী খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে ছোট-খাটো ব্যবসা, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন এমন মানুষের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট ভাবে কেউ বলতে পারছে না। কোনো দপ্তরে এর নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। কারণ প্রতিনিয়ত এই সংখ্যা কমবেশি হয়ে থাকে।
তারপর ও এই শ্রেণির মানুষের সাথে কথা বলে যে ধারনা পাওয়া গেছে তাতে আনুমানিক ৩ -৪ লাখের মত হতে পারে। এমন মানুষ পরিবারের প্রয়োজনে কারো কাছে হাত পাততে ও পারেননা। সামনের দিনগুলোতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ তাঁরা সব সময় ফিটফাট চলে এসেছে।
এখন তাদের আর্থিক কষ্টের বিষয়টি অনেকেই মানতে নারাজ। বিশেষ করে অনুদান বিতরণ করা জনপ্রতিনিধিরাতো মানতেই চাচ্ছেন না। ফলে এই পর্যায়ের মানুষ কোন অনুদান পর্যন্ত না পেলেও তারই বাড়ির পাশে একজন অসচ্ছল ব্যক্তি একাধিক বার পেয়েছে।
করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে কেমন চলছে জীবন যাত্রা? জিজ্ঞেস করতেই মাসদাইর বাজার এলাকার লতিফ নামে এক রিকশা চালক ওইসব কথা বলেন। ঘরে একবেলা খাবারের চাল নাই। জমানো টাকা নাই। যাদের টাকা আছে, তারা চাল, ডাইল কিইন্যা ঘরে আছে। আমার নাই। করোনায় মরমু কবে এর আগে তো খিদায় মরমু।
করোনাভাইরাসের কারণে খেটে খাওয়া মানুষরা বড় বিপাকে। তাদের ঝুঁকিটা শুধু স্বাস্থ্যগত নয়, বরং তার চেয়ে অনেক বেশি জীবন ধারণের। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিটাও অন্যদের থেকে বেশি। তবে করোনা মহামারীর কারণে নিম্ন আয়ের এ সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন, তার থেকে বেশি উৎকণ্ঠিত ক্ষুধা নিবারণের জন্য।
এদিকে দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকেই হঠাৎ যেন নেতাশূন্য হয়ে গেছে পুরো দেশেই। কোথাও কোনো নেতার আনাগোনা চোখে পড়ছে না। যেসব নেতাদের বড় বড় পোস্টার কিংবা ব্যানারে ছেয়ে থাকতো অলিগলি কিংবা বিভিন্ন সড়কের দু’পাশজুড়ে। খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কায় থাকা দেশের লাখ লাখ মেহনতি মানুষের পাশে নেই ভোটের আগের সেই বন্ধুরা।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের পিঠালীপুল এলাকার দিনমজুর হজরত আলী (৫৫) বলেন, ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হয়, এখন করোনার কারণে ভয়ে বাড়িতে বসে আছি। সারাদিনে একবেলা খাবার পাই না।’ পশ্চিম দেওভোগ বাংলাবাজার, ভোলাইল, আদর্শনগর, মিয়াপাড়া, কাশিপুর খিলমার্কেটসহ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকার মানুষ জানান-তারা একদিকে আতঙ্কিত। অপরদিকে কাজ না করলে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা দায়। সব মিলিয়ে ভালো নেই তারা।
Leave a Reply