জাহাঙ্গীর আলম (মুকুল)
খুলনা সাংবাদতাঃ
খুলনা তেরখাদা উপজেলার পারোখালী গ্রামে নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা নদীতে স্পিডবোটের সঙ্গে বালুভর্তি বাল্কহেডের সংঘর্ষে নিহত মনির, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে। প্রাণে বেঁচে যাওয়া ৯ বছরের সন্তান মীম ঢুকরে কাঁদছে মা-বাবা ও বোনদের জন্য।
মঙ্গলবার (৪ মে) পারোখালী গ্রামে একই পরিবারের নিহত ৪ জনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এমন শোকাবহ পরিস্থিতিতে জানাজায় ছিল সর্বস্তরের মানুষের ঢল।জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে মনিরের মায়ের পাশে সারিবদ্ধভাবে সমাহিত করা হয় মনির ও তার স্ত্রী-সন্তানদের। এর আগে সোমবার (৩ মে) সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা মীম তার বাবা, মা ও দুই বোনের লাশ নিয়ে খুলনার তেরখাদা উপজেলা সদরের পারোখালী গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়।
স্থানীয়রা জানান- মনির শিকদার পরিবার নিয়ে ঢাকা থাকে। মনির শিকদারের বাবা আলম শিকদার মারা গেছেন অনেক আগে। রোববার (২ মে) রাত ৮টার দিকে তার মা লাইলী বেগম (৯০) মারা যান। এ সংবাদ তাকে জানানো হয়। বাড়ির সবার সিদ্ধান্ত ছিল, সকালে মনির এসে পৌঁছালে তার মায়ের দাফন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সকাল থেকে মনিরের মোবাইল নম্বর বন্ধ পোওয়া যায়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মনিরের স্ত্রী-সন্তানদের লাশ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়।
এ বিষয়ে মনির শিকদারের ভাই কামরুজ্জামান জানান, রোববার রাতে সাহরি খেয়ে ঢাকা থেকে তেরখাদায় বাড়ির উদ্দেশে তার ভাই মনির শিকদার তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।
উল্লেক্ষ্য গত সোমবার মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় পদ্মা নদীতে একটি বালুভর্তি বাল্কহেডের সঙ্গে যাত্রীবাহী স্পিডবোটের সংঘর্ষে ২৬ জন নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় মনিরের স্ত্রী হেনা বেগম, মেয়ে সুমি আক্তার (৭), রুমি আক্তার (৪) ও মনির শিকদার নিহত হন। প্রাণে বেঁচে আছে শুধু তাদের ৯ বছর বয়সী মেয়ে মীম আক্তার।
মা-বাবা ও দুই বোনকে হারিয়ে শিশু মীম এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। তার কান্না যেন আর থামছে না। অবুঝ মীমকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও নেই স্বজন-প্রতিবেশীদের। মীম এখন কোথায় থাকবে, কীভাবে থাকবে বা তার ভবিষ্যৎ কী- এ নিয়ে চিন্তিত স্বজন-প্রতিবেশীরা। মীমের কান্নায় চোখ ভিজে উঠছে তাদেরও।
মীম খাতুন জানায়- কাপড়ের ব্যাগ ধরে ভেসে পদ্মীর কূলে ফিরতে পেরেছে সে। তবে মা-বাবাকে খুব বেশি মনে পড়ছে তার। ‘মা, আব্বা, তোমরা আমাকে কেন নিয়ে গেলে না…?’ এমনটা বলেই অঝোরে কাঁদছে মীম।
তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম বলেন- উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পক্ষ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে মীমের জন্য এক লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মীমের বিয়ের আগ পর্যন্ত আমরা তার ভরণপোষণ দেব বলে এলাকাবাসীর কাছে ওয়াদা দিয়েছি।
Leave a Reply