বিশেষ প্রতিনিধি : মধ্যবিত্ত শ্রেণীর খবর কেউ নিচ্ছেন না। জেলা প্রশাসন সবার ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবুও সমাজের মধ্যবর্তী শ্রেণীটির মানুষের খবর নিতে কেউ যাচ্ছেনা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ দরিদ্রদের নিয়ে হুলস্থুল ফেলে দিয়েছেন।
একই পরিবারের সদস্যরা একাধিক ত্রাণ পাচ্ছে। মধ্যবিত্তদের কথা কেহ ভাবছেনা বলে মনে করেন বোদ্ধামহল। তাদের মতে, জেলা প্রশাসনের দেয়া নির্দেশনা সঠিকভাবে মানা হচ্ছেনা। মাঠ পর্যায়ে বিষয়টি তদারকির প্রয়োজন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই ভোট ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে রাখার ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে ব্যস্ত। কেউ যেন অভুক্ত না থাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সে নির্দেশনার আলোকে করোনা ভাইরাসের কারণে যে সকল কর্মজীবি মানুষ কর্মহীন হয়ে খাদ্য সমস্যায় আছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করে তদানুযায়ী জেলা প্রশাসন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও তেমনটা হচ্ছেনা।
হট লাইনে প্রাপ্ত ফোন কলের ভিত্তিতে জরুরীভাবে কর্মহীন অসহায় পরিবারের বাড়ি গিয়ে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে সরকারি খাদ্য সহায়তা বিতরণ করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। অনুগ্রহ পূর্বক সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরনের স্বার্থে সঠিক তথ্য হট লাইন নম্বরে জানানোর জন্য সকলকে অনুরোধ করা হলো। কিন্তু বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আমলে নিচ্ছেনা। এ বিষয়টি চেক-ক্রসচেক করার দাবি উঠেছে।
এদিকে, আইইডিসিআর কর্তৃক নারায়ণগঞ্জ জেলাকে করোনা সংক্রমন প্রবন ও ঝুঁকিপূর্ন এলাকা বিবেচিত হওয়ায় আইইডিসিআর প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। করোনা সংক্রমন রোধে প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে আছে। অদ্য হতে উক্ত অভিযান আরও জোরদার করে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় জেলা প্রশাসন মানুষকে ঘরে রাখার জন্য কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণের নেতৃত্বে সার্বক্ষনিক অভিযান পরিচালনা করা হবে। সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারী কাউকে নূন্যতম ছাড় দেয়া হবে না। এ ছাড়া সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেকটি মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার পরিবর্তে মুসুল্লিদের বাসায় নামাজ পরার বিষয়টি ও জামাতে ৫ জনের অধিক অংশ না নেয়ার বিষয় মসজিদের মাইকে ব্যপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
এ ছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নিজস্ব উপাসনালয় ব্যতিত যার যার ঘরে প্রার্থনা কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে প্রচারনা চালানো হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনসচেতনতা কার্যক্রমকে বেগবান রাখার উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলায় জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণের নের্তৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সহযোগিতায় জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সামাজিক দূরত্ব নিয়ন্ত্রণে, বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা মূলক ৩০ টি অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং ০৫ টি মামলায় ২৭,০০০/- টাকা জরিমানা করা হয়।
বিদেশ প্রত্যাগত ব্যক্তিদের আইন ভঙ্গের শাস্তি সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে, বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া এ কার্যালয়ে স্থাপিত জেলা মনিটরিং সেল ও কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘন্টা চালু রাখা আছে। উক্ত কন্ট্রোল রুমে প্রাপ্ত অভিযোগ ও পরামর্শের বিষয়ে তাৎক্ষনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এ পর্যন্ত এ জেলায় সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ২২, তার মধ্যে আরোগ্য লাভকারি মোট ০৩ জন, ০৪ জন মৃত্যুবরণ করছেন, ১৬ জন সন্দেহভাজন করোনা রোগী হিসেবে আইসোলেসনে রাখা হয়েছে। বাড়িতে মোট কোয়ারেন্টাইন ৬০৭ তার মধ্যে অদ্য ০ জন। কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়প্রাপ্ত মোট ৪৫৪ জন, অদ্য ০৪ জন। ১ মার্চ থেকে অদ্য পর্যন্ত বিদেশ থেকে মোট প্রত্যাগত ৬,০২১ জন। ঠিকানা ও অবস্থান চিহ্নিত বিদেশ প্রত্যাগত ব্যক্তি মোট ১২৫৯ জন।
সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র ০৬ টি, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় প্রস্তুতকৃত বেড ৩০ টি, ডাক্তারের সংখ্যা ৯০ জন, নার্সের সংখ্যা ১৭৩ জন। এম্বুল্যান্সের সংখ্যা ০৬ টি। বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র ৭২ টি, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় প্রস্তুতকৃত বেড ৭২ টি, ডাক্তারের সংখ্যা ১০০ জন, নার্সের সংখ্যা ১৮০ জন। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রি (পিপিই) এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ১,০১৫ টি, অদ্য মজুদ রয়েছে ২৫১৩ টি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তার অংশ হিসেবে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দ থেকে বিভিন্ন প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। উপজেলাসমূহে উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ তাদের স্ব-স্ব এলাকায় সরকারি ভাবে প্রাপ্ত এবং স্থানীয় উদ্যোগে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত এ পর্যন্ত মোট ৩৭,০০,০০০/- (সাইত্রিশ লক্ষ) টাকা ও ৮০০ মেট্রিক টন চাল ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনসহ উপজেলা পর্যায়ে বিতরনের জন্য উপ বরাদ্দ প্রেরণ করা হয়েছে এবং প্রায় ৮০,০০০ পরিবার সমূহকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে।
এ ছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য এ জেলায় ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা সিটি কর্পোরেশন এলাকাসহ সকল উপজেলায় উপ বরাদ্দ প্রদান করার কাজ চলমান। বেসরকারী উদ্যোগে প্রাপ্ত মানবিক সহায়তার মধ্যে ৩৫৭৬ প্যাকেট খাদ্য সহায়তা এবং ২১,০০,০০০/- (একুশ লক্ষ) টাকা চেকের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে ২২৮৭ প্যাকেট খাবার ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
কোন উপকারভোগী যেন বাদ না পরে এবং দ্বৈততা পরিহারের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার মানবিক কাজে উদ্যোগী বিত্তশালী ব্যক্তি/সংগঠন/এনজিও কোন খাদ্য সহায়তা প্রদান করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ২০ নং নির্দেশনা অনুযায়ী আবশ্যিকভাবে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে নেয়ার জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হলো। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে সবধরনের জনসমাগম, জটলা বা ভিড় পরিহার করার জন্য এবং নিরাপত্তার প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
Leave a Reply