বর্তমান খবরঃ নারায়ণগঞ্জে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী এসএমই পণ্য মেলা ২০২০’। তবে মেলার প্রথম দিনেই ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তাসহ বেশ কিছু বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে আয়োজকদের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে লিখিত অভিযোগ।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে শহরের ইসদাইর এলাকায় নারায়ণগঞ্জ ওসমানী পৌর স্টেডিয়াম মাঠে এসএমই ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সাত দিনব্যপী এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও বিসিকের সহযোগিতায় এ মেলায় নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট ৪৭ জন উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করছেন।
এদিকে মেলার প্রথমদিনেই মেলার অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে অভিযোগ করেন মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তারা। তারা জানান, আশানুযায়ী কোনো সুযোগ সুবিধাই তারা পাচ্ছেন না। মেলার স্থান নির্বাচন, প্রচারণা ঘাটতির কারণে নেই কোন গ্রাহক। অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। এদিকে ত্রিপল ছাড়া শুধু কাপড়ে তৈরি স্টলে মালামাল নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উদ্যোক্তারা। একই সঙ্গে গরম, সুপেয় পানির অভাব, অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার, ব্যবস্থাপকদের দায়িত্বহীনতা তাদের ভোগান্তি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিষয়গুলো উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সকল উদ্যোক্তরা।
বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের একটি বড় অংশজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে এ মেলা কিন্তু নেই কোনো গ্রাহক। তাই ফোনে গেম খেলে, গল্পগুজব করে অলস সময় পার করছেন উদ্যোক্তারা। তবে অনেকগুলো স্টল এখনো ফাঁকা। এদিকে প্যান্ডেলের কাপড়ের তৈরি স্টলে পসরা সাজিয়ে বসলেও শঙ্কিত উদ্যোক্তারা। কেননা স্টলগুলো এতটাই অরক্ষিত যে, যেকোনো সময় ঘটতে পারে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এত বড় একটি মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে মাত্র ৮ জন আনসার সদস্য। মেলার পাশেই পুকুর পাড়ে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী শৌচাগার। টিনের তৈরি শৌচাগারগুলোর মধ্যে একটির দরজা ভাঙ্গা। অন্যান্যগুলো অস্বাস্থ্যকর এবং ব্যবহার অযোগ্য। এদিকে মেলায় আগত গ্রাহক এবং উদ্যোক্তাদের জন্য মাঠের এক প্রান্তে একটি ছোট্ট পানির ট্যাংক দেয়া আছে। তবে এ পানির বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। উদ্যোক্তারা।
এদিকে মেলা তদারকির জন্য কোন ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। একটি স্টলের সামনে কন্ট্রোল রুম লেখা থাকলেও সেখানে পাওয়া যায়নি কাউকেই। এ নিয়েও রয়েছে উদ্যোক্তাদের নানা অভিযোগ।
চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে মেলায় অংশগ্রহণ করতে আসা অরমিতা দাস পড়েছেন মহাবিপদে। সারাদিন শহর ঘুরেও কোনো থাকার ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি। মেলার স্টলে থাকার মতো কোনো ব্যবস্থা কিংবা নিরাপত্তা নেই। বলে জানালেন তিনি।
অরমিতা দাস বলেন, অন্য জেলা থেকে আগত উদ্যোক্তাদের থাকার কোনো ব্যবস্থা করেনি আয়োজকরা। সারাদিন শহর ঘুরেও কোনো হোটেল আমরা পাইনি। একটি হোটেলে গিয়েছিলম কিন্তু হোটেলের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখে ফিরে আসি। স্টলেও থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার মালামাল রেখে অন্য কোথাও যাওয়ার ভরসাটুকুও পাচ্ছি না।
আরেক উদ্যোক্তা ফেরদৌসী মোরর্শেদা বলেন, আজ মেলায় অংশগ্রহণ করে আমি হতাশ। আমরা ছোট উদ্যোক্তা। আমাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই তাই আমরা এইসব মেলা এবং অনলাইনেই আমাদের পণ্য বিক্রি করি। আমরা ছোট উদ্যোক্তা হলেও আমাদের সময়ের মূল্য আছে। আমরা সবাই পার্ট টাইম হিসেবে এ কাজ করি। সকাল থেকে এখানো আমার কোনো পণ্য বিক্রি হয়নি। মেলার পজিশন দেখে মনে হচ্ছে গ্রাহকরা আসবেও না।
মর্জিনা বেগম বেবি এসেছেন ঢাকা মোহাম্মদপুর থেকে। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ফাস্ট চয়েজ। মর্জিনা বেগম বেবি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমি খুবই হতাশ। মেলার নিরাপত্তা নেই, খাবার পানি নেই, প্রচন্ড গরম কিন্তু কোনো ফ্যান নেই, স্টলের উপর ত্রিপল নেই, টয়লেটের অবস্থা খুবই খারাপ। কোনো সুস্থ্য মানুষ এ টয়লেট ব্যবহার করতে চাইবে না। সর্বোপরি গ্রাহক নেই।
তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে আমারা আয়োজকদের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনছেন না। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সবাই চলে গেছে। আমাদের দেখার মত, অভিযোগ শুনার মত কেউ নেই। আমি সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখবো, তারপর চলে যাবো। মেলায় আর থাকবো না।
Leave a Reply