বর্তমান খবর ডেস্ক:
শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গার পর ধলেশ্বরীর পানির দূষণ বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছাচ্ছে। দূষণ শুরু হয়েছে ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীতেও। রয়েছে দখলদারদের থাবা। এছাড়া বালু উত্তোলনেও নদী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ৪টি নদী ও ১টি নদ দ্বারা বেষ্টিত। সরকারি হিসাবে এ সকল নদ-নদী দখলে প্রায় ৩ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত। যদিও বাস্তবে এ সংখ্যা কয়েক গুণ। আর নারায়ণগঞ্জে নদী দূষণের তালিকায় রয়েছে ৭৪টি প্রতিষ্ঠান।
দখলবাজরা শুধু নদীর দুই পাড় দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা প্রবহমান নদীর পানিতে বাঁশ-কাঠের মাচা তুলে বানিয়েছে ঘরবাড়ি-দোকানপাট।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ দেশে ‘নদী রক্ষা দিবস’ পালিত হচ্ছে। নদী রক্ষায় সচেতনতা বাড়তে প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
জানা গেছে, জেলাটির পূর্ব সীমানা দিয়ে মেঘনা নদী, পশ্চিম সীমানার কিছু অঞ্চল দিয়ে বুড়িগঙ্গা এবং দক্ষিণ/পশ্চিম সীমানায় ধলেশ্বরী নদী প্রবাহিত। ঢাকা থেকে প্রায় ২০ কি.মি দক্ষিণ-পূর্বে লাঙ্গলবন্দের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহীত হয়েছে। প্রতিবছর চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে এই স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদে পুণ্যস্নানার্থে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তপ্রাণের আগমন ঘটে। কিন্তু প্রতিনিয়ত আমাদের নদী বিভিন্ন ভাবে দূষিত হচ্ছে। শিল্পকারখানার বর্জ্য, কৃষিতে ব্যবহৃত সার-কীটনাশক এবং ঘরবাড়ির আবর্জনাও মিশে যাচ্ছে নদীতে। এর প্রভাবে সবচেয়ে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, মুহাম্মদ ইবনে বতুতার আমলে অন্যতম ভুমিকা রেখেছিল এই শীতলক্ষ্যা নদী। তখন থেকেই এই জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য হতো নদী গুলোর মাধ্যমে। শীতলক্ষ্যা নদীর দিকে তাকালে এখন কষ্ট লাগে, কিছু দেখি না। এখন নদী দূষণ হচ্ছে আমাদের মানবসভ্যতা ও বিভিন্ন গার্মেন্টস এর দূষিত বর্জ্য দ্বারা। যদিও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু পরিশেষে বেহাল অবস্থাই রয়ে যাচ্ছে। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে উচ্ছেদ অভিযান আমরা প্রায়ই দেখি কিন্তু সেটি কিছু সময়ের জন্য। কয়েকদিন পর আগের অবস্থাই ফিরে আসে। তাই আমাদের ও বিভিন্ন গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষকে এই বিষয় গুলোতে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
নারায়ণগঞ্জে কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক রুমন রেজা বলেন, পরিবেশ ও আগামী ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের অন্তত নদী গুলোকে বাঁচানো দরকার। আজকে হোক, কালকে হোক- এক সময় নদীর প্রয়োজন হবেই। আমাদের সরকারকেও এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে। যেই উদ্দ্যোগই নেওয়া হক না কেন, সঠিক পদ্ধতি কার্যকর যেন হয়; সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাঈদ আনোয়ার বলেন, আমাদের দেশের জন্য নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। নদী ও পরিবেশ মানুষের চলাচলের উপযোগী করতে আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা করছি। আগামী ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নদী রক্ষায় সবাইকে সচেতন হওয়া দরকার। এ সময় তিনি কল-কারখানা ও গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষকে আরও সচেতন হওয়ার আহব্বান জানান।
Leave a Reply